fungus

ফাঙ্গাল সংক্রমণ কি?

ফাঙ্গাস বা ছত্রাক হল একপ্রকার ক্ষুদ্র মাইক্রোঅরগ্যানিজিম এবং প্রধানত ইউক্যারয়োটিক প্রজাতিভুক্ত। এটা শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে গুরুতর সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে, যা Fungus Infection নামে পরিচিত। সঠিক সময়কাল ধরে সঠিক চিকিৎসা করলে এটা ভালো হয়ে যায়। তবে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে গেলে বা অনিয়মিত ঔষধ সেবনের ফলে এর চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং।

ফাঙ্গাল সংক্রমণ কি গুরুতর?

কারণে সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর ১৩ লক্ষ মানুষ মারা যান।

যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যাদের (যেমন H.I.V. ও ক্যান্সার রোগী), তাদের ক্ষেত্রে হসপিটাল থেকে হওয়া ফাঙ্গাল সংক্রমণ অনেক সময়ে গুরুতর বিপদ । প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এইসব লোকদের ক্ষেত্রে ফাঙ্গাল সংক্রমণ অনেকসময়ে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হিসেবে হয়। সংক্রমণ কতটা সাধারণ কিংবা গুরুতর সেটা বিষয় নয়, যেকোন ফাঙ্গাল সংক্রমণ এড়ানোর জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরী।


ত্বক ও পায়ের নখের সংক্রমণ সহ অধিকাংশ ফাঙ্গাল ইনফেকশন কিন্তু যথাযথ চিকিৎসার সাহায্যে সামালানো যায় এবং এইগুলো মারাত্মক নয়। চিকিৎসা না করলে ফাঙ্গাল সংক্রমণ কিন্তু শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে যায় এবং সেটা মারাত্মক। ফাঙ্গাল ম্যানেঞ্জাইটিস ও রক্তস্রোতের সংক্রমণে সবাই কিন্তু যথেষ্ট অসুস্থ হতে পারে এমনকি মৃত্যু অবধি হতে পারে।   


বিভিন্ন ধরণের ফাঙ্গাস ইনফেকশন হতে পারে যেমন-

  • অ্যাথলেটস ফুট ইস্ট ইনফেকশন
  • জক ইচ
  • রিংওয়ার্ম সংক্রমণ
  • নখের সংক্রমণ 
  • ওরাল থ্রাস মাথার ত্বকের সংক্রমণ 


কি কারণের জন্য ফাঙ্গাস ইনফেকশন হয়?

এটা সত্যি যে এইসব সংক্রমণ ফাঙ্গাসের থেকে হয়, কিন্তু এর জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণের জন্য দায়ী Fungus বা ছত্রাক এর নাম


  • অ্যাথলেট ফুট- ট্রাইকোফাইটন রাবরাম 

  • ইস্ট সংক্রমণ- ক্যান্ডিডা অ্যালবিক্যানস 

  • জক ইচ- এপিডারমোফাইটোন ফ্লকোসাম, ট্রাইকোফাইটন মেন্টাগ্রোফাইটস এবং টি.রাবরাম 

  • রিংওয়ার্ম সংক্রমণ- ট্রাইকোফাইট, মাইক্রোস্পোরাম বা এপিডারমোফাইটন

  • নখের সংক্রমণ- ট্রাইকোফাইটন রাবারাম ও ক্যান্ডিডা সহ ডার্মাটোফাইটিস

  • ওরাল ট্রাস- ক্যান্ডিডা অ্যালবিক্যান্স, ক্যান্ডিডা ট্রপিক্যালিস ও ক্যান্ডিডা গ্ল্যাব্রাটা 

  • মাথার ত্বকের সংক্রমণ- ট্রাইকোফাইটন ও মাইক্রোস্পোরাম জেনেরাতে হওয়া ডার্মাটোফাইটস 


ফাঙ্গাল সংক্রমণের লক্ষণ ও উপসর্গ কি কি?

এটা সবসময়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের লালচে দাগ হয় সেটাই না, বিভিন্ন ধরণের ফাঙ্গাল সংক্রমণের লক্ষণ ও উপসর্গ একে অন্যদের তুলনায় আলাদা হয়, যা হলঃ


অ্যাথলেটস ফুটঃ


লক্ষণ- শুষ্ক ও লালচে ত্বক, ত্বক ফাটা, ঘা-কালশিটে এবং সেটা ফেটে যাওয়া, বিবর্ণ পায়ের নখ।


উপসর্গ- পায়ের আঙুলের মাঝের জ্বলুনি। 


ইস্ট সংক্রমণঃ


লক্ষণ- যোনিতে লাল দাগ এবং যোনি থেকে ঘন ঘন নির্গমন।


উপসর্গ- যোনিতে অস্বস্তি এবং মুত্র নিঃসরণের সময়ে তীব্র জ্বালা।


জক ইচঃ


লক্ষণ- উরুতে লালচে ভাব, এই লালচে স্থানের প্রান্ত ফেটে যাওয়া।


উপসর্গ- ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় জ্বলুনি, চুলকানি এবং ত্বকের মৃত কোষ ওঠে।


রিংওয়ার্ম সংক্রমণঃ


লক্ষণ- লাল রং-র মতন ক্ষত, ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা ফেটে যেতে পারে।


উপসর্গ- এই জায়গায় জ্বলুনি ও চুলকানি।


নখের সংক্রমণঃ


লক্ষণ- বির্বণ নখ, স্বাভাবিক আকার ও গড়ন ধ্বংস।


উপসর্গ- ক্ষতিগ্রস্ত নখে ব্যথা ও চাপ, পলকা ও ভঙ্গুর নখ।


ওরাল থ্রাসঃ


লক্ষণ- মুখ থেকে সাদা রঙের পুরু নির্গমন, মুখের চারপাশে ত্বক ফাটা ও লালচে হয়ে যাওয়া। 


উপসর্গ- জিভে ব্যথা ও লাল হয়ে যাওয়া, খেতে কষ্ট, বিস্বাদ লাগা, দাঁতের নীচে ও মাড়িতে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া। 


মাথার ত্বকের সংক্রমণঃ


লক্ষণ- মাথার ত্বকে লালচে ক্ষত, এবং আঁশ বেরনো।


উপসর্গ- নিয়মিত চুল পড়া, মাথার ত্বকে ব্যথা ও নরম হয়ে যাওয়া। 


ফাঙ্গাল সংক্রমণের ঝুঁকি কোথায়?

অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন দায়ী থাকলেও অন্য আরও ঝুঁকির কারণ থাকে, যা বিভিন্ন ধরণের ফাঙ্গাল সংক্রমন ছড়ানোর জন্য সমানভাবে দায়ী থাকে, যা হলঃ


  • •অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল কিংবা অতিরিক্ত ব্যবহারের কারনে অনেক সময়ে শরীরের ভেতরে থাকা ফাঙ্গাল সংক্রমণের মোকাবিলাকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। 
  • •কর্টিকস্টেরয়েড (যেমন Dexamethasone, Prednisolone,Betamethsone ইত্যাদি ), ও কেমোওর্থোপিউটিক সহ ইমিউনোসাপ্রেয়াসিভ এজেন্টের ব্যবহার ফাঙ্গাল সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • •এইচআইভি, ক্যান্সার ও পুড়ে যাওয়া রোগীদের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নানান ফাঙ্গাল সংক্রমণকে ডেকে আনে ও অসুস্থ হয়ে পরে। 
  • •যেসব মানুষরা গ্রীষ্মপ্রধান দেশের আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়ায় থাকেন, তাদের ফাঙ্গাল সংক্রমণের ধাত থাকে। 


ফাঙ্গাল সংক্রমণ কি ছোঁয়াচে?

সব ফাঙ্গাল সংক্রমণ ছোঁয়াচে নয় কিন্তু রিংওয়ার্ম সংক্রমণ সহ অধিকাংশ প্রচলিত ধরণ অনেকসময়ে ছোঁয়াচে। এইসব ফাঙ্গাল সংক্রমণ সহজেই দৈনিক ব্যবহার্য্য জিনিষ ভাগ করে নেবার কারণে একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায়।


কী ভাবে ফাংগাস ইনফেকশন ছড়ানো আটকাবেন ?


ভেজা ত্বক একেবারেই নাঃ 

ফাঙ্গি শরীরের ভেজা ও আর্দ্র কোণে থাকতে ভালোবাসে। শরীরকে পরিষ্কার, শুকনো ও উষ্ণ রেখে এদেরকে দূরে রাখা যায়। প্রতিবার স্নানের পরে ভালো করে শুকিয়ে নিন এবং নিম্নলিখিত অঙ্গ ভালোকরে শুকিয়ে নিন।


  • আঙুল
  • স্তনের টিস্যুর নীচের অংশ
  • যৌনাঙ্গের আশেপাশ
  • ত্বকের ভাঁজের অংশ 

ঢিলে জামাকাপড় পড়ুনঃ 

শরীরে ঘাম যাতে না শুকোয় তাই ঢিলে জামাকাপড় পড়ুন। কটন-ভিত্তিক ফ্যাব্রিক পড়ুন। 


পরিচ্ছনতাঃ 

রোজকার জামাকাপড় রোজ কাচুন। অন্তর্বাস ও মোজাও কাচুন। ইস্ত্রি করে পড়ুন। 


স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুনঃ 

যথাযথ যত্ন নিয়ে বাড়ি ও শোয়ার ঘরের প্রতিটি কোণা পরিষ্কার করুন। বাথরুমের জন্য ব্লিচিং পাউডার ও ফেনল ইত্যাদি জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন। উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে বাড়ির মেঝে পরিষ্কার করুন। 


নিজের জিনিষ অন্যকে দেওয়ার মানে কিন্তু যত্ন নেওয়া নয়ঃ 

নিজের রোজকার ব্যবহারের কাপড় ও তোয়ালে, চিরুনি ও কসমেটিক ব্রাশের মতন অন্যান্য জিনিষ কাউকে ব্যবহার করতে দেবেন না। 


সবসময়ে হাত পরিষ্কার করুনঃ

হাত ধোয়ার স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলুন এবং এটাকে দৈনন্দিন নিয়মের আবশ্যিক অংশ বানান। খাওয়ার আগে যাতে শিশুরা হাত ধোয়ে সেটা নিশ্চিত করুন এবং দেখুন যাতে যথাযথ পরিমাণ জল ও সাবান ব্যবহার করে।  


বাড়ীর পোষ্যকে কুকুর ও বিড়াল গুলোকে পশু চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে সময় মতো চিকিৎসা করান ঃ

 আপনি নিজের পোষ্যকে হয়ত মন থেকে ভালবাসেন কিন্তু তাদের প্রায়ই আদর করলে কিন্তু শরীরে অনেকরকম ফাঙ্গি হবার সম্ভবনা হয়। পোষ্য ও রাস্তার বেড়াল ও কুকুরের অনেকধরনের ফাঙ্গাল সংক্রমণ থাকে। তাদের অনেকসময়ে ত্বকে নেড়া দাগ-ছোপ দেখা যায়। এইসব জায়গা ধরলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।  


৮. হ্যাপি ফিটঃ 

পা হল বিভিন্ন ফাঙ্গির প্রবেশপথ এবং যেকোন ধরণের ফাঙ্গাল সংক্রমণ এড়াতে সঠিক ও যথাযথ পরিচর্যার দরকার। সবসময়ে পা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার সাথে দুটো আঙুলের মাঝখান পরিষ্কার করুন। নিয়মিত মোজা পরিষ্কার করুন এবং নিজের জুতো ও মোজা অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না। বাগান ও রাস্তায় খালি পায়ে না গেলেই ভালো। 


৯. নখের যত্নঃ 

নখের মধ্যে যেকোন ধরণের ফাঙ্গাল সংক্রমণ হবার সম্ভবনা থাকে বলে যন্ত্রণাদায়ক ফাঙ্গাসের আক্রমণ এড়াতে নখের যথাযথ পরিচর্যার দরকার। সবসময়ে, স্যানিটাইজ নেইল কাটার দিয়ে নখ কাটুন। অস্বাস্থ্যকর ম্যানিকিওর বা পেডিকিওর পদ্ধতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। নখ কামড়ানো একেবারেই সুঅভ্যাস নয় এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করা দরকার। 


১০. কুঁচকি পরিষ্কার রাখুনঃ 

ইস্টের সংক্রমণ হলো কুঁচকির সবথেকে প্রচলিত সংক্রমণ। অধিকাংশ মহিলাই এই সমস্যায় জীবনে অন্ততপক্ষে একবার ভোগে। কুঁচকির সংক্রমণের জন্যে দায়ী অন্যতম প্রধান কারণ হলো অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক এবং সেটা খুবই মারাত্মক। সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক স্থাপন করুন। নিজের কুঁচকি পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে চেষ্টা করুন। বারবার একই অন্তর্বাস ব্যবহার করবেন না। নিয়মিত অন্তর্বাস ধুয়ে পরিষ্কার করবেন। 


১১. স্নানের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিনঃ 

পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সঠিকভাবে চুল ও ত্বক পরিষ্কার করুন। নিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। স্নান করার সময়ে পর্যাপ্ত পরিমান জল ও সাবান ব্যবহার করুন। স্নানের সময়ে শুকনো পরিচ্ছন্ন তোয়ালে ব্যবহার করুন। নিজের তোয়ালে ও সাবান অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না।  


১২. দাঁতের যত্নঃ 

দাঁতের সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। এটা মুখের ভেতরকে ওরাল থ্রাস ও অন্যান্য সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। রোজ দিনে দুইবার ব্রাশ ও ফ্লস করুন। মুখের ভেতর ক্যাভিটি ও ফাঙ্গি হওয়া আটকাতে উষ্ণ নুন জলে মুখ ধোবেন।

১৩. নিজের জামা কাপড় আলাদা কাচার ব্যাবস্থা করুণ।

বাড়ীর অন্য কারুর ফাংগাস ইনফেকশন থাকলে একসাথে জামা কাপড় wash করলে ও এই ইনফেকশান ছড়াতে পারে।


No comments:

Bottom Ad [Post Page]